জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস
১৯৪৩ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের ভয়াবহতায় ফেনীর এতদ অঞ্চলের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এতদ অঞ্চলের ছাত্রদের, যুবকদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে পড়ে। অপরদিকে এতদঅঞ্চলের বেশ কয়েক মাইলের মধ্যে স্কুল না থাকাতে বিদ্যা শিক্ষার সুযোগ সুবিধা বন্ধ হবার উপক্রম হয়। ফেনী-নেয়াখালী রাস্তা ছিল কর্দমময।এখান থেকে একদিকে চার মাইল দূরে ফেনী শহরের স্কুলে অথবা অন্যদিকে ছয় মাইল দূরে দাগুন ভূইয়া হাই স্কুলে হেটে গিয়ে পড়াশুনা করা ও ছিল অসম্ভব। কোন বাসা বাসাবাড়িতে ছেলেমেয়ে পড়ানোর বিনিময়ে জায়গির থেকে স্কুলে ভর্তি হয়ে শিক্ষা ছলিয়ে সবার জন্য সম্ভব ছল না। জায়লস্কর পূর্ব ভূইয়া বাড়ির স্কুরগামি ছাত্রছাত্রির সংখ্যাও কম ছিলনা।
এসব অবস্থা দর্শনে এই বাড়ির সূর্য সন্তান খান সাহেব মৌলভী আবদুল খালেক, যার অমূল্য সহযোগিতায়, ফেনী জেলা শহরের বেশির ভাগ শিক্ষা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি তার ছোটভাই আবদুল ওহাব বি, এ কে তাদের জায়গায় হাই স্কুর স্থাপনের আদেশ দেন। সে মতে মোহাম্মদ আমান তালুকদার ও মোহাম্মদ হামিদ তালুকদার এর ওয়ারিস গনের দানকৃত বসতবাড়ির সন্মুখস্থ ফেনী মাইজদি রোড সংলগ্ন জমি ভরাট করে স্কুল স্থাপন করা হয়। বাড়ির সন্মুখভাগে পূর্বে থেকে পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়।
এই বাড়ির তৎসময়কার ছোট বড় সবাই বিশেষ করে, খান সাহেব মৌলবী আবদুর খালেক উকিল, জনাব আবদুল হক বি, এ, মৌলবী আবদুল হক, সফিকুর রহমান গেম শিক্ষক, এ, এম, এম সালেহ উদ্দিন, আমিনুল মিল্লাত রশিদ, আহম্মদ উল্লা (আত্বিয়) প্রধান শিক্ষক হিসাবে, ডাঃ এ টি এম রফিকুল হক, এ টি এম সাহেব উদ্দিন, এ এন এম জিয়া উদ্দিন, ড. বদরুল মিল্লাত (প্রিন্সিপাল সাহিন কলেজ ঢাকা, অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়, প্রিন্সিপাল ফোজদার হাড কেডেট কলেজ), জনাব কামাল উদ্দিন এম এ (ফাস্ট ক্লাস কোলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়, অধ্যাপক হুগলি কলেজ, অধ্যাপক সিলেট ইসলামিয়া কলেজ, সময় সময় বিনা বেতনে শিক্ষাকতা করে, অফিসিয়েল সহযোগিতা বা ভলানটিয়ার হিসাবে সর্বাত্তক সহযোগিতা করেন।
প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন এ বাড়ির ক্রিতি সন্তান জনাব আবদুল ওহাব বি, এ ছিলেন প্রতিষ্ঠা কালীন হেডমাস্টার। এর পর আসেন আহম্মদ উল্লাহ (এ বাড়ির জামাতা) । তৃতীয় প্রধান শিক্ষক হিসাবে আসেন এ বাড়ির আর এক কৃতি সন্তান জনাব এ, এম, এম, সালেহ উদ্দিন বি, এ, বি, এড। ডোনার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে এ বাড়ির সদস্যদের জন্য স্কুল গভর্নিং বডির তিনটি পদ বরাদ্দ ছিল। স্কুল নিয়ন্ত্রন, উন্নয়ন, পাঠদান সর্ব বিষয় ছিল এ বাড়ির নিয়ন্ত্রন।
এর প্রবাভ ছিল অমূল্য, স্কুলের শিক্ষা ক্ষেত্রে, ক্রিয়া ক্ষেদ্রে, সাংক্রিতিক অঙ্গনে যাহাকিছু অর্জন তা এই আমলেই হয়েছিল।স্কুলে ছাত্র ভর্তি বৃদ্দি ও পড়ালেখায় আগ্রহ সৃষ্টির উদ্বেশ্যে, এ বাড়ির স্বদেশ বিদেশে কর্মরত সদষ্যদের সহযোগিতায় আমেরিকার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে সামাজিক, পারিবারিক, শিক্ষামূলক চায়াছবি প্রদর্শনের জন্য প্রজেক্টর এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ডায়নামো সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রতি সপ্তাহে সামাজিক ও শিক্ষামূলক ছায়াছবি দেখানেঅ হতো। প্রথম দিকে টিফিন ও সময় সময় হাল্কা নাস্তার ও ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
 মাঝে মধ্যে সন্ধার পর, এই প্রজেক্টর, ইমেজ স্ক্রিন, ডায়নামো স্কুলের পিছনে অবস্থিত “ভূইয়া বাড়ির” বহিরাঙ্গনে খোলা জায়গায় আনা হতো ও ছায়াছবি প্রদর্শনের জন্য সংযোজিত হতো। সামাজিক, শিক্ষামুলক, ও কৃষিকাজ সম্পর্কিত ছায়াছবি এখানে প্রদর্সিত হতো। বাড়ির সদস্যবৃন্দ ও গ্রামের জনগনের সাথে আমারো অনেকবার এরুপ শিক্ষামূলক ছবি দেখার সুযোগ হয়েছিল।
জনাব এম এম সালেহ উদ্দিন প্রধান শিক্ষক থেকে অবসর গ্রহনের পর বিভিন্ন কারনে স্কুলের উপর এ বাড়ির নিয়ন্ত্র অনেকটা কমে যায়। ফল ও দেখা দেয় অভাবিত, স্কুল তার পূর্বে অগ্রগতির পথ তেকে বিচ্যুত হয়, লক্ষ্যচ্যুত হয়। আশায় আছি এক সময় এ স্কুল আবার তার মূল ধারায় ফিরে আসবে।
এই স্কুল অনেক ক্রীড়াবিদ সৃষ্টি করেছিলেন, যাদের মধ্যে এ সবাড়ির তোফাইল আহমদ এবং নাছির উদ্দিন যথাক্রমে ব্যক ও ফরওয়াড ক্রিয়াবিদ হিসাবে সুনাম অর্জন করে ছিলেন।  বৃটিস ভারত শাসন আমলের শেষ দিকে জনাব সামসুল মিল্লাত ও আমিনুল মিল্লাত ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। ১৯৪৭ইং পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার পর প্রতি স্বাধীনতা দিবষে ফেনী হাই স্কুল মাঠে প্রিতি ফুটবল ম্যচে অংশ গ্রহনের জণ্য জনাব আমিনুল মিল্লাতকে সাবেক কৃতি ফুটবলার হিসাবে আমন্ত্রন জানানো হতো।